আলোর রোশনাই আর তারকার বর্ণচ্ছটা ছড়িয়ে বর্ণাঢ্য ও জমজমাট উদ্বোধনী হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের। বিশাল খোলা আকাশে বর্ণিল আলোর ছাউনি ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টেছে। সেই সঙ্গে বদলেছে মঞ্চের পারফরম্যান্স। রঙে-আলোয়, নাচে-গানে মেতেছে দর্শক। উদ্বোধনের পর পুরো অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলিউডের দুই তারকা সালমান-ক্যাটরিনার ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে শেষ হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
আজ সন্ধ্যা থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরের শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পরিবেশ ছিল এমনই জমকালো। এখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বিপিএলের
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ এই আসরের শোভা বাড়িয়ে স্টেজ মাতান দেশ-বিদেশের বরেণ্য শিল্পীরা।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা বিপিএলের এবারের বিশেষ আসরের শুভসূচনা ঘোষণার পরই শুরু হয় বর্ণাঢ্য আতশবাজি। চলে প্রায় সাত মিনিট ধরে।
এই আসর সোনায় সোহাগা করে তুলতে এসেছেন বলিউড ভাইজান সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফ। রাত ১০টা ১০ মিনিটে ক্যাটরিনা কাইফ মঞ্চে এসেই ঝড় তোলেন। গাড় নীল রঙের ফ্রক পরিহিত ক্যাটরিনা তার দল নিয়ে মিনিট সাতেক মঞ্চে নাচ পরিবেশন করেন। এর আগে তিনি লাল পোশাকের আট বেহারার কাঁধে চেয়ার-পালকিতে চড়ে মঞ্চ্রে কাছে যান। সেখানে পালকি থেকে নেমে হেঁটে মঞ্চে ওঠেন ক্যাটরিনা।
ক্যাটরিনার পরিবেশনা শেষে উপস্থাপক বলিউড ভাইজানের আগমনের ক্ষণ গণনা করেন দর্শকদের নিয়ে। এর কিছুক্ষণ পর সালমানকে দর্শকদের দিকে পিছ দিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কালো প্যান্ট আর কালো ফুলহাতা গেঞ্জির ওপর ছাই রঙা কটি পরা সালমান এরপর মঞ্চজুড়ে আলোড়ন তোলেন সঙ্গীয় নারী-পুরুষ নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে।
এরপর সালমান-ক্যাটরিনা একসঙ্গে মঞ্চে ওঠেন। মাইক্রোফোন হাতে বলিউড ভাইজান সালমান দর্শক উদ্দেশে বলেন, ’আসসালামু আলাইকুম।’
এরপর ক্যাটরিনা কাইফ বলেন, ‘নমস্তে। আসসালামু আলাইকুম। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। লাভ ইউ বাংলাদেশ।’
দুজনই বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। সালমান বলেন, তিনি শেখ হাসিনাকে ভালোবাসেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেসে হাততালি দিতে দেখা যায়।
সবশেষে সালমান-ক্যাটরিনা এককণ্ঠে আওয়াজ তোলেন- ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’। পর্দা নামে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনীর।
এর আগে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৫টা ৫৫ মিনিটে মইদুল ইসলাম খান ডি রকস্টার শুভ আসেন দিনের প্রথম পারফরম্যান্স নিয়ে। ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ এবং ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক’ গান গেয়ে শোনান তিনি।
শুভর পর মঞ্চে আসেন সঙ্গীতশিল্পী রেশমি মির্জা। তার কয়েকটি গান পরিবেশনের পর তৃতীয় পারফরমার হিসেবে মঞ্চে আসেন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা নগর বাউলখ্যাত মাহফুজ আনাম জেমস। এই সময় উপস্থিত দর্শকরা উল্লাস করে তাকে স্বাগত জানান। ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ ‘মা’ ‘তারায় তারায়’ এবং একটি হিন্দি গান পরিবেশন করেন গুরু।
‘সুলতানা বিবিয়ানা’ গানটির শেষ দিকে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে হসপিটালিটি বক্সে ঢোকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট। সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণার জন্য নবনির্মিত স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধন ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সব দর্শককে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর নামে এই টুর্নামেন্ট সফল হোক, সার্থক হোক। একই সঙ্গে এই আয়োজনের সফলতা কামনা করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-২০১৯ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’
উদ্বোধন ঘোষণার পর ৭ মিনিটের বর্ণাঢ্য আতশবাজি শেষে আবার শুরু হয় জেমসের গান। তিনটি গান করে মঞ্চ থেকে বিদায় নেন তিনি।
জেমসের পর মঞ্চে ওঠেন ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সনু নিগম। তিনি প্রথমে একটি হিন্দি গান করেন। এরপর ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’সহ দুটি বাংলা গান করেন।
সনু নিগমের পারফরম্যান্সের মাঝামাঝি সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বলিউডের টাইগার খান সালমান খান ও অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ। তাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠান মঞ্চে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় হিন্দি করে বিদায় নেওয়ার পর ১০ মিনিটের মতো বিরতি ছিল অনুষ্ঠানের। এ সময় চলে লেজার লাইট শো।
এরপর মঞ্চে ওঠেন আরেক ভারতীয় সঙ্গীত তারকা কৈলাস খের। তিনি একের পর এক জনপ্রিয় গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন দর্শকদের।
কৈলাশের পরিবেশনার পর দর্শকরা তখন বিশেষ দুই তারকার অপেক্ষায়। এ সময় তারা মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে হাত তুলে নাড়াতে থাকেন। বিরতি শেষে অনুষ্ঠান উপস্থাপক ঘোষণা দেন দর্শকদের অপেক্ষার অবসানের। এ সময় স্টেডিয়ামজুড়ে দর্শক হাততালি ও উল্লাস করে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গতকাল হলেও মাঠের লড়াই শুরু হবে আগামী ১১ ডিসেম্বর। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও সিলেট থান্ডার। এবারের বিপিএলে অংশ নিচ্ছে মোট সাতটি দল।
বিশেষ এই আসরে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে প্রত্যেক দল। প্রতিটি দলের টিম ডিরেক্টর বিসিবি নির্বাচিত করে দিয়েছে।